কবিতার বিশাল ভান্ডারে আপনাকে স্বাগতম

ফিচারড

কবিতা আর কবিতা। একটা সময় এমন ছিল যখন কবিতা পড়তে হবে শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যেত। স্কুলের বইগুলোতে ‘কবিতা’ কে শুধুই বাংলা পরীক্ষার একটা অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নম্বর পাওয়ার জন্য গোগ্রাসে মুখস্ত করে যেতাম। স্যাররা কি সত্যিই কবিতার আসল রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারতো? জানিনা। তবে কবিতার সাথে সত্যিকারের পরিচয় হতে বেশিদিন সময় লাগেনি। বাংলা কবিতার যে বিশাল ভান্ডার রয়েছে তা আর যেকোন ভাষার সাহিত্যভান্ডারের তুলনায় কম নয়।

এই ব্লগটি বাংলা সাহিত্যের সেই সব কালজয়ী প্রতিভাবান কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা দিয়ে গড়ে উঠেছে যাঁরা বাংলা ভাষাকে তাঁদের অমর সব কীর্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন। ব্লগটিতে খুব শীঘ্রি তাদের জীবনী সম্পর্কেও তুলে ধরা হবে। ভাষা দিয়ে কবিতা বিচার করা যায়না তাই, মূলত এই ব্লগটি বাংলা কবিতার হলেও, বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার কবিতাও এখানে ঠাই পাবে। আর এই ব্লগটির নতুন ব্যবহারকারীও যোগ করা হবে। কারণ আমাদের একার পক্ষে এই কাজ করে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

আর কথা নয়। পড়ে দেখুন কবিতার খাতা।

*** ফেসবুকে আমাদের ব্লগের পেইজ খোলা হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পেইজটিতে লাইক করলে এর মাধ্যমে আপনারা আমাদের এখানে নতুন কবিতা পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই জানতে পারবেন। ধন্যবাদ। ***

প্রাক্তন – জয় গোস্বামী

ঠিক সময়ে অফিসে যায়?
ঠিক মতো খায় সকালবেলা?
টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি?
না ক্যান্টিনেই টিফিন করে?
জামা কাপড় কে কেচে দেয়?
চা করে কে আগের মতো?
দুগগার মা ক’টায় আসে?
আমায় ভোরে উঠতে হত
সেই শার্টটা পরে এখন?
ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা?
নিজের তো সব ওই পছন্দ
আমি অলিভ দিয়েছিলাম
কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে?
দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে
শিবমন্দির, জানলা থেকে
দেখতে পেতাম রিক্সা থামল
অফিস থেকে বাড়িই আসে?
নাকি সোজা আড্ডাতে যায়?
তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও
বন্ধুরা সব আসে এখন?
টেবিলঢাকা মেঝের ওপর
সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো
গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায়
টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে
কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার
পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি
তখন তো আর হুঁশ থাকে না
রাতবিরেতে কে আর দেখবে।
কেন, ওই যে সেই মেয়েটা।
যার সঙ্গে ঘুরত তখন।
কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা?
সে তো কবেই সরে এসেছে!
বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি
অত কান্ড সামলাবে কে!
মেয়েটা যে গণ্ডগোলের
প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম
কে তাহলে সঙ্গে আছে?
দাদা বৌদি? মা ভাইবোন!
তিন কূলে তো কেউ ছিল না
এক্কেবারে একলা এখন।
কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়?
কে ডেকে দেয় সকাল সকাল?
রাত্তিরে কে দরজা খোলে?
ঝক্কি পোহায় হাজার রকম?
কার বিছানায় ঘুমোয় তবে
কার গায়ে হাত তোলে এখন
কার গায়ে হাত তোলে এখন?

পল্লী স্মৃতি – বেগম সুফিয়া কামাল

বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লী ময়ের কোল,
ঝাউশাখে যেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল
কুলের কাটার আঘাত লইয়া কাঁচা পাকা কুল খেয়ে,
অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে
পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
চৈত্র নিশির চাঁদিমায় বসি‘ শুনিয়াছি রূপকথা,
মনে বাজিয়াছে সুয়ো দুয়োরাণী দুখিনি মায়ের ব্যথা
তবু বলিয়াছি মার গলা ধরে, “মাগোসেই কথা বল,
রাজার দুলালে পাষাণ করিতে ডাইনী করে কি ছল!
সাতশ‘ সাপের পাহারা কাটায়ে পাতালবাসিনী মেয়ে,
রাজার ছেলেরে বাঁচায়ে কি করে পৌঁছিল দেশে যেয়ে।”
কল্পপূরীর স্বপনের কাঠি বুলাইয়া শিশু চোখে
তন্দ্রদোলায় লয়ে যেত মোরে কোথা দূর ঘুমলোকে
ঘুম হতে জেগে বৈশাখী ঝড়ে কুড়ায়েছি ঝরা আম
খেলার সাথীরা কোথা আজ তারাভুলিয়াও গেছি নাম।
নববর্ষার জলে অবগাহি কভু পুলকিত মনে
গান গাহিয়াছি মল্লার রাগে বাদলের ধারা সনে;
শিশির সিক্ত শেফালী ফুলের ঘন সৌরভে মাতি
শারদ প্রভাতে সখীগন সাথে আনিয়াছি মালা গাঁথি
পল্লী নদীর জলে ভাসাইয়া মোচার খেলার তরী,
কাঁদিয়া ফিরেছি সাঁঝের আলোতে পুতুল বিদায় করি
আগামী দিনের আশা-ভরসার কত না মধুর ছবি
ফুঁটিয়া উঠেছে আঁখির পাতায় ডুবেছে যখন রবি।

যখন বৃষ্টি নামলো – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো
কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বল
নেই নিকটে- হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার আগে
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-মেশা দিনও?
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন ।

বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম পাবো তোমার দেখা
হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে- অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!

রবিহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

দুপুরের রবি পড়িয়াছে ধলে অস্ত- পথের কোলে
শ্রাবনের মেঘ ছুটে এল দলে দলে
উদাস গগন-তলে
বিশ্বের রবি, ভারতের কবি,
শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি
তুমি চলে যাবে বলে।
তব ধরিত্রী মাতার রোদন তুমি শুনেছিলে না কি,
তাই কি রোগের ছলনা করিয়া মেলিলে না আর আঁখি?
আজ বাংলার নাড়িতে নাড়িতে বেদনা উঠেছে জাগি’;
কাঁদিছে সাগর নদী অরন্য, হে কবি, তোমার লাগি’।
তব রসায়িত রসনায় ছিল নিত্য যে বেদ-বতী
তোমার লেখনি ধরিয়াছিলেন যে মহা সরস্বতী,
তোমার ধ্যানের আসনে ছিলেন যে শিব-সুন্দর,
তোমার হৃদয় কুঞ্জে খেলিত সে মদন-মনোহর,
যেই আনন্দময়ী তব সাথে নিত্য কহিত কথা,
তাহাদের কেহ বুঝিলনা এই বঞ্ছিতদের ব্যথা?
কেমন করিয়া দিয়া কেড়ে নিল তাঁদের কৃপার দান,
তুমি যে ছিলে এ বাংলার আশা প্রদীপ অনির্বাণ।
তোমার গরবে গরব করেছি, ধরারের ভেবেছি সরা;
ভুলিয়া গিয়াছি ক্লৈব্য দীনতা উপবাস ক্ষুধা জরা।
মাথার উপরে নিত্য জ্বলিতে তুমি সূর্যের মত,
তোমারি গরবে ভাবিতে পারিনিঃ আমরা ভাগ্যহত।
এত ভালোবাসিতে যে তুমি এ ভারতে ও বাংলায়,
কোন অভিমানে তাঁদের আঁধারে ফেলে রেখে গেলে,
হায়।
বল- দর্পীর মাথার উপরে চরন রাখিয়া আর
রখা করিবে কে এই দুর্বলের সে অহংকার?
হের, অরন্য-কুন্ডল এলাইয়া বাংলা যে কাঁদে,
কৃষ্ণা- তিথির অঞ্চলে মুখ লুকায়েছে আজ চাঁদে।
শ্রাবন মেঘের আড়াল টানিয়া গগনে কাঁদিছে রবি,
ঘরে ঘরে কাঁদে নর-নারী, “ফিরে এস আমাদের কবি।”
ভারত- ভাগ্য জ্বলিছে শ্মশানে, তব দেহ নয়, হায়।
আজ বাংলার লক্ষীশ্রীর সিঁদুর মুছিয়া যায়।
আজ প্রাচ্যের কাব্যছন্দ সুরের সরস্বতী
তোমার শ্মশান- শিখায় দগ্ধ করিল চাদের জ্যোতি।
এত আত্নীয় ছিলে তুমি বুঝি আগে বুঝে নাই কেহ;
পথে পথে আজ লুটাইছে কোটি অশ্রু-সিক্ত দেহ।
যেই রস-লোক হতে এসেছিলে খেলিতে এ পৃথিবিতে,
সেথা গিয়া তুমি মোদেরে স্মরিয়া কাদিবে না কি নিভৃতে?
তোমার বানীর সুরের অধিক প্রিয়তম ছিলে তুমি,
বাংলার শ্রীর চেয়ে ভালোবেসেছিলে বঙ্গভুমি।
আশ্বাস দাও, হে পরম প্রিয় কবি, আমাদের প্রানে,
ফিরিয়া আসিবে নব রুপ লয়ে আবার মোদের টানে।
এত রস পেয়ে নীরস শীর্ণ ক্ষুধিত তরে
কেন কেঁদেছিলে, কেন কাঁদাইলে আজীবন প্রেম ভরে।
শুনেছি, সুর্য নিভে গেলে হয় সৌরলোকের লয়;
বাংলার রবি নিভে গেল আজ, আর কাহারও নয়।
বাঙ্গালি ছাড়া কি হারালো বাঙ্গালি কেহ বুঝিবেনা আর,
বাংলা ছাড়া এ পৃথিবীতে এত উঠিবে না হাহাকার।
মোদের আশার রবি চলে গেলে নিরাশা-আঁধারে ফেলে,
বাংলার বুকে নিত্য তোমার শ্মশানের চিতা জ্বেলে।
ভু-ভারত জুড়ে হিংসা করেছে এই বাংলার তরে-
আকাশের রবি কেমনে আসিল বাংলার কুঁড়ে ঘরে।
এত বড়, এত মহৎ বিশ্ববিজয়ী মহা-মানব
বাংলা দীন হীন আঙ্গিনায় এত পরমোৎসব
স্বপ্নেও আর পাইব কি মোরা? তাই আজি অসহায়
বাংলার নরনারী, কবি-গুরু, শান্তনা নাহি পায়।
আমরা তোমারে ভেবেছি শ্রীভগবানের আশীর্বাদ,
সে আশিস যে লয় নাহি করে মৃত্যর অবসাদ।
বিদায়ের বেলা চুম্বন লয়ে যাও তব শ্রীচরনে,
যে লোকেই থাক হতভাগ্য এ জাতিরে রাখিও মনে।

কোভিড ১৯ – মমতা ব্যানার্জি

Mamata,Banerjee

বস্তাপচা ময়লায় ঢেকে গেছে পৃথিবীটা
মানুষ, মানুষ থেকে দূরে।
ছোঁয়া যাবেনা – স্নেহের পরশকে।

কালও যা ছিল –
হাতের ছোঁয়ায় আশির্বাদ
আজ তা পরশমনির
স্পর্শ থেকে বাদ।

এ কি ভয়ার্ত বেশ …
সারাবিশ্ব এক থেকে অন্যে –
সন্দিহান অবকাশের নিশিরাত্রি!
মাত্র দুমাসে পৃথিবীর
হাওয়া বদল!
দেখা হল কথা হল না।
মনটায় মেঘের ছায়া,
চুলগুলো উদভ্রান্ত।
কারো সাথে দেখা হল –
কথা হচ্ছে না।
সারা পৃথিবীটা –
বদলে গেল।
বদলে গেল মানসিকতা –
সবাই দূরে দূরে।
দূরের দূরত্বটাই আজ সবচেয়ে বেশি ভরসার।
সারা বিশ্ব আজ বিশ্ব পন্ডিত!
কি পারলোনা –
একটা ভাইরাসকে দমন করতে?
হার মানলো সারা বিশ্ব?

সবার মুখ দেখা
সবার জন্য বন্ধ।
সব গবেষণাকে
জব্দ করলো
একটা মাত্র শব্দ
করোনা, কোভিড ১৯।