প্রাক্তন – জয় গোস্বামী

ঠিক সময়ে অফিসে যায়?
ঠিক মতো খায় সকালবেলা?
টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি?
না ক্যান্টিনেই টিফিন করে?
জামা কাপড় কে কেচে দেয়?
চা করে কে আগের মতো?
দুগগার মা ক’টায় আসে?
আমায় ভোরে উঠতে হত
সেই শার্টটা পরে এখন?
ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা?
নিজের তো সব ওই পছন্দ
আমি অলিভ দিয়েছিলাম
কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে?
দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে
শিবমন্দির, জানলা থেকে
দেখতে পেতাম রিক্সা থামল
অফিস থেকে বাড়িই আসে?
নাকি সোজা আড্ডাতে যায়?
তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও
বন্ধুরা সব আসে এখন?
টেবিলঢাকা মেঝের ওপর
সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো
গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায়
টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে
কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার
পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি
তখন তো আর হুঁশ থাকে না
রাতবিরেতে কে আর দেখবে।
কেন, ওই যে সেই মেয়েটা।
যার সঙ্গে ঘুরত তখন।
কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা?
সে তো কবেই সরে এসেছে!
বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি
অত কান্ড সামলাবে কে!
মেয়েটা যে গণ্ডগোলের
প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম
কে তাহলে সঙ্গে আছে?
দাদা বৌদি? মা ভাইবোন!
তিন কূলে তো কেউ ছিল না
এক্কেবারে একলা এখন।
কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়?
কে ডেকে দেয় সকাল সকাল?
রাত্তিরে কে দরজা খোলে?
ঝক্কি পোহায় হাজার রকম?
কার বিছানায় ঘুমোয় তবে
কার গায়ে হাত তোলে এখন
কার গায়ে হাত তোলে এখন?

বিবাহিতাকে – জয় গোস্বামী

joy_Goswami
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।

খতিয়ান – রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ

rudra mohammad shahidullah
হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় ঋণে
অথচ আমার শস্যের মাঠ ভরা।
রোদ্দুর খুঁজে পাই না কখনো দিনে,
আলোতে ভাসায় রাতের বসুন্ধরা।
টোকা দিলে ঝরে পচা আঙুলের ঘাম,
ধস্ত তখন মগজের মাস্তুল
নাবিকেরা ভোলে নিজেদের ডাক নাম
চোখ জুড়ে ফোটে রক্তজবার ফুল।
ডেকে ওঠো যদি স্মৃতিভেজা ম্লান স্বরে,
উড়াও নীরবে নিভৃত রুমালখানা
পাখিরা ফিরবে পথ চিনে চিনে ঘরে
আমারি কেবল থাকবে না পথ জানা–
টোকা দিলে ঝরে পড়বে পুরনো ধুলো
চোখের কোণায় জমা একফোঁটা জল।
কার্পাস ফেটে বাতাসে ভাসবে তুলো
থাকবে না শুধু নিবেদিত তরুতল
জাগবে না বনভূমির সিথানে চাঁদ
বালির শরীরে সফেদ ফেনার ছোঁয়া
পড়বে না মনে অমীমাংসিত ফাঁদ
অবিকল রবে রয়েছে যেমন শোয়া
হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় প্রেমে
অথচ আমার ব্যাপক বিরহভূমি
ছুটে যেতে চাই– পথ যায় পায়ে থেমে
ঢেকে দাও চোখ আঙুলের নখে তুমি।

তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউলAnisul Haque
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
বাকি অংশ

পৃথক পাহাড় – হেলাল হাফিজ

আমি আর কতোটুকু পারি ?

কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়,
আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।

ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।

আমি আর কতোটুকু পারি ?
এর বেশি পারেনি মানুষ।