সোজাসুজি -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে-
দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে।
শুক্লসন্ধ্যা চৈত্রমাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে,
আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি-
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।।

বসন্তীরঙ বসনখানি নেশার মতো চক্ষে ধরে,
তোমার গাঁথা যূথীর মালা স্তুতির মতো বক্ষে পড়ে;
একটু দেওয়া, একটু রাখা, একটু প্রকাশ, একটু ঢাকা,
একটু হাসি, একটু শরম- দুজনের এই বোঝাবুঝি
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।।

মধুমাসের মিলন-মাঝে মহান্ কোনো রহস্য নেই,
অসীম কোনো অবাধ কথা যায় না বেধে মনে-মনেই।
আমাদের এই সুখের পিছু ছায়ার মত নাইকো কিছু,
দোঁহার মুখে দোঁহে চেয়ে নাই হৃদয়ের খোঁজাখুঁজি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।

ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে, ভাই, ভাষাতীত।
আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে, ভাই, আশাতীত!
যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর-কিছু নাই-
সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।

শুনেছিনু প্রেমের পাথার, নাইকো তাহার কোন দিশা-
শুনেছিনু প্রেমের মধ্যে অসীম ক্ষুধা, অসীম তৃষা।
বীণার তন্ত্রী কঠিন টানে ছিঁড়ে পড়ে প্রমের তানে,
শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলিঘুঁজি।
আমাদের এই দোঁহার মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।

উৎসর্গ – উৎপলকুমার বসু

দয়িতা, তোমার প্রেম আমাদের সাক্ষ্য মানে নাকি?
সূর্য-ডোবা শেষ হল কেননা সূর্যের যাত্রা বহুদূর।
নক্ষত্র ফোটার আগে আমি একা মৃত্তিকার পরিত্যক্ত,বাকি
আঙুর, ফলের ঘ্রাণ, গম, যব, তরল মধু-র

রৌদ্রসমুজ্জল স্নান শেষ করি। এখন আকাশতলে সিন্ধুসমাজের
ভাঙা উতরোল স্বর শোনা যায় গুঞ্জনের মতো-
দয়িতা, তোমার প্রেম অন্ধকারে শুধু প্রবাসের
আরেক সমাজযাত্রা। আমাদেরই বাহুবল বিচূর্ণ, আহত

সেই সব সাক্ষ্যগুলি জেগে ওঠে। মনে হল
প্রতিশ্রুত দিন হতে ক্রমাগত, ধীরে ধীরে, গোধুলিনির্ভর
সূর্যের যাত্রার পথ। তবু কেন ষোলো

অথবা সতের-এই খেতের উৎসব শেষে, ফল হাতে, শস্যের বাজারে
আমাদের ডেকেছিলে সাক্ষ্য দিতে? তুমুল, সত্বর,
পরস্পরাহীন সাক্ষ্য সমাপন হতে হতে ক্রমান্বয়ে বাড়ে।

সাবধান – সুকুমার রায়

আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস?
ফোঁস্ ফোঁস্ অত জোরে ফেলোনাকো নিশ্বাস।
জানোনা কি সে বছর ওপাড়ার ভূতোনাথ,
নিশ্বাস নিতে গিয়ে হয়েছিল কুপোকাৎ?
হাঁপ ছাড় হ্যাঁস্ফ্যাঁস্ ও রকম হাঁ করে-
মুখে যদি ঢুকে বসে পোকা মাছি মাকড়ে?
বিপিনের খুড়ো হয় বুড়ো সেই হল’ রায়,
মাছি খেয়ে পাঁচ মাস ভুগেছিল কলেরায়।

পুরোটা পড়ুন

মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী

মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
বেশ, বলতে পরি
ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো
ফুলপিসিমার বাড়ি
গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন
তখন মানে ? কবে ?
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে
ছাদের থেকে হাতছানি দিতো
ক্যারাম খেলবি ? … আয় …
সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায়
সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয়
হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।

পুরোটা পড়ুন

স্মাইল প্লিজ – তারাপদ রায়

স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,
দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলে
আপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,
তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকে
আর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেন
ঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো হ্যাবিট নেই, তবে,
কি বলছেন অনেকদিন, অনেকদিন হাসার অভ্যাস,
হাসার-ও অভ্যাস নেই? এদিকে যে রোদ পড়ে এলো
এ রকম ঘাড়গোঁজা বিমর্ষ মুখের একদল
মানুষের গ্রুপফটো, ফটো অনেকদিন থেকে যায়,
ব্রমাইড জ্বলে যেতে প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর।
বিশ-পঁচিশ বছর পরে যদি কোনো পুরোনো দেয়ালে
কিংবা কোনো অ্যালবামে এরকম ফটো কেউ দেখে,
কি বলবেন, বলবেন, ক্যামেরাম্যানের ত্রুটি ছিলো,
ঘাড় ঠিকই সোজা ছিলো, সব শালা ক্যামেরাম্যানের
সেই এক বোকার শাটারে এই রকম ঘটেছে।